Loading...

Hotline : 025511511, Phone No : 01723341649

Home > BBOA > Borishal Bivag

বরিশাল বিভাগের পরিচিতি

ফতেহাবাদ, খলিফাতাবাদ, জাহানাবাদ, ভুলুয়া ও বাদাভ‚মি’র অংশবিশেষসহ গোটা মধ্য-দক্ষিণের দ্বীপাঞ্চলযোগে বঙ্গোপসাগরের তীরে সুবেবাংলার প্রাচীন জনপদ ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ’ রাজ্য গড়ে উঠেছিলো। খ্রিষ্টীয় ৪র্থ ও ৫ম শতকে মৌর্য ও গুপ্ত শাসন আমলে কোটালীপাড়া’কে ঘিরে গাঙ্গেয় অববাহিকায় চর বা দ্বীপযোগে গড়ে ওঠে প্রাচীন রাষ্ট্র ‘গঙ্গারিডি’। গঙ্গারিডি রাষ্ট্রের জনগোষ্ঠী চন্দ্রভÐ্র, মহারাজা চন্দ্রবর্মা বা চন্দ্রগুপ্তের নাম হতে ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামকরণের মত রয়েছে। গাঙ্গেয় বা পদ্মা-মেঘনার নিম্ন-অববাহিকায় জেগে ওঠা নবীন চন্দ্রাকৃতি দ্বীপ (চর) হতে ‘চন্দ্রদ্বীপ’ বা ‘সাগরদ্বীপ’ নামকরণেরও রয়েছে ভিন্ন মত। তবে, দনুজগুরু ব্র²চারী চন্দ্রশেখরের নামে ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামকরণের রয়েছে অধিক জনশ্রæতি। বিক্রমপুরের কাত্যায়নী উপাসক চন্দ্রশেখর চক্রবর্তী’র শিষ্য লক্ষণপৌত্র গৌড়বাসী শ্রী রামনাথ দনুজমর্দ্দন দে’ ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের প্রথম সেন বা কায়স্থ রাজা। কথিত রয়েছে, গুরুর নামেই তিনি রাজ্যের নামকরণ করেন। ইতিহাস বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মগ-পর্তুগীজ জলদস্যুদের উৎপাতসহ রাজনৈতিক কারণে গঙ্গারিডি রাষ্ট্র উৎসারিত চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের রাজাগণ রাজধানী বারবার পরিবর্তন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় কোটালীপাড়া হতে চন্দ্রদ্বীপের রাজধানী পর্যায়ক্রমে ইদিলপুর, গোবিন্দপুর, বাউফল, বিশারীকাঠি, ক্ষুদ্রকাঠি ও হোসেনপুর হয়ে সর্বশেষ বাবুগঞ্জের মাধবপাশাতে স্থাপিত হয়েছে। ১৩ হতে ১৬ শতক পর্যন্ত চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য শাসনে একমাত্র মহিলা রাজা ছিলেন জয়দেবকন্যা রাণী কমলাদেবী। বাউফলের কচুয়াতে তেঁতুলিয়া নদীর তীরে তিনি প্রকাÐ এক দীঘি খনন করেন। দীঘিতে জল কামনায় জীবন বিসর্জনের গল্প রয়েছে তাঁর। কমলাদীঘি নামে যা এখন কেবলই স্মৃতিময়। রাণীপুত্র রাজা পরমানন্দেরও রয়েছে তেঁতুলিয়া নদীর উচ্ছ¡সিত প্লাবনে সলিল সমাধির ভিন্ন গল্প। পরমানন্দপৌত্র রাজা কন্দর্প নারায়ণ ছিলেন বার ভূঁইয়াদের মধ্যকার অন্যতম এক নরপতি। কন্দর্পপুত্র দশম রাজা রামচন্দ্র বসু ছিলেন ভুলুয়া বিজয়ী এক মহান যোদ্ধা। স¤্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে পরাস্ত হয়ে রাজা রামচন্দ্র হারান চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের স্বাধীন রাজার পদবী, বনে যান তিনি চন্দ্রদ্বীপ-জমিদার। রামচন্দ্রপৌত্র প্রতাপ নারায়ণের কন্যা ছিলেন বিমলা। বিমলার জ্যেষ্ঠপুত্র রাজা উদয় নারায়ণ ছিলেন চন্দ্রদ্বীপের রাজ-জমিদার। জলসংকট নিরসনে উদয়পুত্র রাজা শিব নারায়ণের সহধর্মিণী রাণী দুর্গাবতী’র নামে মাধবপাশাতে ‘দুর্গাসাগর’ খননের মধ্য দিয়ে রাজপরিবার রয়েছেন ইতিহাসের পাতাজুড়ে। শিবপুত্র রাজা জয় নারায়ণ ছিলেন ব্রিটিশ-জমিদার। বহুবছরের বকেয়া খাজনার জেরে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানী সরকার কর্তৃক ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নিলামে তোলাসহ জয়পুত্র রাজা নৃসিংহ নারায়ণের অকাল প্রয়াণের মধ্য দিয়ে মূলত অবসান ঘটে দীর্ঘশাসনের চন্দ্রদ্বীপ রাজ্য ও রাজবংশ। ঐতিহাসিকদের মতে, সুমাত্রা-জাভা দ্বীপ হতে আগত অস্ট্রিক বা বঙ্ জাতির আদি বাসস্থান বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ। বঙ্ অপভ্রংশতায় বাঙ্ (জলাভ‚মি) এর সাথে আল (জমির বাঁধ) যুক্ত হয়ে বাঙাল (জাতিসত্ত¡া) ও বাঙলা (ভ‚-খন্ড/ভাষা) শব্দের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়। ভ‚গোলবিদ টলেমি’র বাঙলা’কে ‘বারাকোয়া’ কিংবা চৈনিক পর্যটকদের বাঙলা’কে ‘বাঞ্জালা’ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে ‘বাকলা’ নামের উৎপত্তির সাথে ইতিহাসবিদ সিরাজ উদ্দীন আহমেদের ‘বাঙালা’ (বঙ্গ+আল) হতে ‘বাকলা’ নামের উৎপত্তির মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ‘শস্যব্যবসায়ী’ এর আরবী প্রতিরূপ বাকলা হতে ‘বাকলা’ নামকরণেরও রয়েছে ভিন্ন মত। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলার প্রতি বরাবরই দুর্বল ছিলেন আরব-পারস্য বণিকরা। তাইতো, বাণিজ্যের তাগিদে বাঙলা ভ‚-খন্ডের উন্নয়ন অর্থাৎ সমুদ্রতীরে বাঙলানগর বা বাকলাবন্দর নির্মাণের সাথে জুড়ে আছেন শস্যবণিক জনৈক ড. কানুনগো। মোগল রাজত্বকালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে ‘সরকার-বাকলা’ কোটালীপাড়া, চন্দ্রদ্বীপ, গ্রেদবন্দর, বুজুর্গ উমেদপুর ও সেলিমাবাদসহ মোট ৪৭টি পরগণায় বিভক্ত ছিলো। নবাব আলীবর্দী খাঁ এর আমলের উমেদপুর-সেলিমাবাদ পরগণার প্রভাবশালী জমিদার মির্জা আগাবাকের খাঁ ১৭৪১ সালে উমেদপুর পরগণার গোলাবাড়িতে তাঁর নিজের নামে একটি বন্দর (বাকেরগঞ্জ) প্রতিষ্ঠা করেন। মুসলিম সা¤্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে ১৭৫৭ সালে ইংরেজরা বাংলার দক্ষিণ, ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ’ রাজ্য দখল করে নেয়। গোড়ার দিকে ‘বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ’ অঞ্চল ঢাকা জেলার অধীনে থাকলেও ১৭৮১ সালে ইংরেজ সরকার প্রথম সেলিমাবাদ পরগণার নলছিটি থানার বারৈকরণে সিভিলকোর্ট প্রতিষ্ঠা করে। ১৭৯২ সালে যা বুজুর্গ উমেদপুর পরগণার ‘বাকেরগঞ্জ’ বন্দরে স্থানান্তরিত হয়। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সরকার ১৭৯৭ সালে ঢাকার দক্ষিণের এ চর ও বনাঞ্চল নিয়ে জমিদার আগাবাকেরের নামে ‘বাকেরগঞ্জ’ জেলা প্রতিষ্ঠা করে। নাব্যতা সংকটে জেলাদপ্তর ১৮০১ সালে নাম অপরিবর্তিত রূপে বরিশালে স্থানান্তরিত হয়। একজন কালেক্টর নিয়োগের মধ্য দিয়ে ১৮১৭ সালে বাকেরগঞ্জ জেলা পূর্ণাঙ্গ স্বীকৃতি পায়। অতঃপর জেলাসদর পৌরসভায় উন্নীত হয় ১৮৭৬ সালে। বরিশালের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবনে তদানিন্তন ব্রিটিশ সরকার প্রণীত ‘বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিপোর্ট, ১৯১৩-১৯১৪’ এ ফরিদপুর ও খুলনা জেলাসহ বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ থাকলেও বাস্তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে ফরিদপুর ও খুলনা জেলা বাদ দিয়ে ১৯৯৩ সালের ১ জানুয়ারি সরকারের এক গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জেলা

বাকেরগঞ্জের নাম বিলুপ্তিসহ বরিশাল একইসাথে জেলা ও বিভাগ মর্যাদার আসনে অধীষ্ঠিত হয়। চর-নদী আর সৈকত-সমুদ্রের লীলাভ‚মি বরিশাল মূলত দেশের পঞ্চম প্রশাসনিক বিভাগ। বিভাগীয় বরিশাল পৌরসভা ৩০টি ওয়ার্ডযোগে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হয় ২০০২ সালে। বিভাগে উন্নীত হওয়ার পূর্বে বরিশাল জেলা (বাকেরগঞ্জ) প্রথমে ঢাকা ও পরবর্তীতে খুলনা বিভাগের অন্তর্ভূক্ত ছিলো। বাকেরগঞ্জ জেলাধীন পটুয়াখালী মহকুমা সর্বপ্রথম ১৯৬৯ সালে জেলার মর্যাদা পায়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পিরোজপুর মহকুমা একযোগে জেলার মর্যাদা পায়। ১৩,৭৫৪.০৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সক্রিয় বদ্বীপ অঞ্চলীয় বিভাগ বরিশালে রয়েছে ১টি সিটি কর্পোরেশন, ৬টি জেলা, ৪২টি উপজেলা, ৫০টি থানা, ২৬টি পৌরসভা, ৩৬১টি ইউনিয়ন ও ৪,৪১৪টি গ্রাম। মোট জনসংখ্যা ৮৭,৬০,৩৫৬ জন, তন্মধ্যে পুরুষ ৫০.৬৭% ও মহিলা ৪৯.৩৩%। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.১৮%। বিভাগে সংসদীয় আসন সংখ্যা ২১টি, শিক্ষার হার ৬১.১৫%। অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল, সেক্টর কমান্ডার মেজর এম এ জলিল, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, আদিকবি মিনাথ, মধ্যযুগের কবি বিজয়গুপ্ত, চারণকবি মুকুন্দ দাস, কবি বেগম সুফিয়া কামাল, কামিনী রায়, কুসুম কুমারী দাশ ও আহসান হাবীব, কন্ঠশিল্পী আবদুল লতিফ, সুরকার শহীদ আলতাফ মাহমুদ, দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর, আধুনিক বরিশালের রূপকার অশ্মিনী কুমার দত্ত প্রমুখ কিংবদন্তী বরিশালের অহংকার। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের সম্প্রীতির সহ-অবস্থান রয়েছে বরিশালে। সহমর্মিতা ও অতিথি পরায়ণতা তাদের সহজাত ধর্ম। দুর্যোগে লড়াকু এ অঞ্চলের লোকেরা খুবই সাহসী। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন ও ভাষা আন্দোলনসহ স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য। বৃটিশ পরিব্রাজক রাল্ফ এর বিবরণ মতে, বরিশাল (চন্দ্রদ্বীপ) মূলত চাল, কার্পাস, রেশমবস্ত্রের একটি সমৃদ্ধ জনপদ অর্থাৎ এগ্রিকালচারাল ম্যানচেস্টার। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ধান-নদী-খালের বরিশালকে ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ উপাধি প্রদান করেন। এরই সমর্থন মিলে মি. বেভারীজ বরিশালকে বাংলার ‘শস্যভাÐার’ হিসেবে আখ্যা দেয়ার মধ্যে। ম্যাজিস্ট্রেট-কালেক্টর ড. হেনরি বেভারিজ লেখা গ্রন্থ দঞযব উরংঃৎরপঃ ড়ভ ইধশবৎমধহল- ওঃং ঐরংঃড়ৎু ্ ঝঃধঃরংঃরপং’ এ তিনি উল্লেখ করেছেন; ‘বাকেরগঞ্জের অধিবাসী বাঙালি চরিত্রের খাঁটি নিদর্শন’। ‘শস্যভাÐার’ ও ‘বাঙালি’ উপাধির পাশাপাশি জাতীয় অহংকার ইলিশসহ আহরিত অভ্যন্তরীণ মৎস্যসম্পদের সিংহভাগের যোগানদাতা বরিশাল বিধায় একে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না। অন্যদিকে বিভাগবাসীরা একই ভাষাভাষী ও একই অঞ্চলের অধিবাসী হওয়ায় তারা নিজেদেরকে ‘বরিশাইল্যা’ বলতে সংকোচবোধ করেন না, হীনম্মন্যতায় ভোগেন না। ভ‚-স্বর্গ বরিশাল মূলত উষ্ণ, শুষ্ক, আর্দ্র ও ক্রান্তীয় মৌসুমী জলবায়ু প্রভাবের। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ১০-১২ ফুট উচ্চতায় ২১ ডিগ্রী ৪৮মিনিট ১ সেকেন্ড হতে ২৩ ডিগ্রী ৩ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড উত্তর-অক্ষাংশ ও ৮৯ ডিগ্রী ৫১ মিনিট ১১ সেকেন্ড হতে ৯১ ডিগ্রী ২ মিনিট ৭ সেকেন্ড পূর্ব-দ্রাঘিমা রেখা অবধি বরিশাল বিভাগের অবস্থান। বিভাগ সীমানার উত্তরে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে মেঘনা নদী ও ল²ীপুর-নোয়াখালী জেলা এবং পশ্চিমে বলেশ^র-মধুমতি নদী ও বাগেরহাট-গোপালগঞ্জ জেলার অবস্থান। বিভাগীয় মোট আয়তনের এক-পঞ্চমাংশ (২,৭২৮ বর্গকিলোমিটার) বিস্তৃত অভ্যন্তরীণ জলরাশির বরিশাল বিভাগ ঘিরে বয়ে চলেছে কীর্ত্তণখোলা, আড়িয়ালখাঁ, তেঁতুলিয়া, মেঘনা, কালাবদর, দামোদর, ইলিশা, হিজলা, শাহবাজপুর (চ্যানেল), হরিণঘাটা, বিষখালী, পায়রা, রামনাবাদ (চ্যানেল), লেবুখালী, আন্ধারমানিক, আগুনমুখা, খাকদোন, কচা, বলেশ^র, বুড়িশ^র, জয়ন্তী, ধানসিঁড়ি, জাঙ্গালিয়া, পানগুছি, সন্ধ্যা, সুগন্ধা, গাবখান (চ্যানেল), টরকী, নয়াভাঙ্গানী, বোয়ালিয়া, পোনা, লোহালিয়া, গজালিয়া, পাংশা, আইলা, সাপলেজা, লাউকাঠি, শ্রীমন্ত, কালিজিরা, কালিগঙ্গা, বিঘাই, কারখানা, খয়রাবাদ, পাÐব ও রাঙ্গামাটিয়াসহ অসংখ্য জানা-অজানা নদ-নদী। জলবেষ্টিত বৃহত্তর বরিশালের আবহমানকালের যোগাযোগ ও পণ্য বাহনের ঐতিহ্যে রয়েছে বাহারী বিচিত্রসব লঞ্চ, স্টিমার, নৌকা ও ট্রলার। অপার দিগন্ত, সমুদ্র অর্থনীতির হাতছানি আর স্বপ্নীল বদ্বীপ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িতব্য ধারায় ‘পদ্মা-পায়রা’র আশীর্বাদে মৎস্য, কৃষি ও পর্যটন আকর্ষণের যাবতীয় সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ব্যাপক শিল্পোন্নয়ন ও বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে মধ্য-দক্ষিণের অবারিত এ জলবিভাগে।

জেলা বিবরণঃ


বরিশাল:ডাচ্-ইঙ্গ বংশোদ্ভ‚ত যুগল ‘ব্যারি-শেলী’র অসম প্রেমের রূপকথা, পর্তুগীজ বণিকদের ‘বরি-সল্ট’র ব্যবসায়ের ইতিকথা কিংবা বাদাভ‚মিতে ‘বড়শের(বাঘ)’র আবাস নিয়ে যতকথা হতে মূলত বরিশাল জনপদের নামকরণের কিংবদন্তী রয়েছে। ঢাকার নবাব পরিচালিত লবণ-চৌকি ‘গ্রেদবন্দর’ বরিশাল শহরের আদি পরিচিতি। জেলা বরিশালের (বাকেরগঞ্জ) প্রতিষ্ঠাকাল ১৭৯৭ খ্রিষ্টাব্দ। নদী¯œাত রূপ-গুণে ‘বাংলার রাণী’র খেতাব পেয়েছে এ বরিশাল। কীর্ত্তণখোলা নদীর তীরে বরিশাল জেলা অবস্থিত। জেলার আয়তন ২,৭৯০.৫১ বর্গকিলোমিটার। ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১০টি উপজেলা, ১৪টি থানা, ৬টি পৌরসভা, ৮৭টি ইউনিয়ন ও ১,২৯০টি গ্রামযোগে জেলাটি গঠিত। বরিশাল জেলার জনসংখ্যা ২৪,৮৭,০১২ জন, সংসদীয় আসন ৬টি ও শিক্ষার হার ৬১.২০%। জেলা ব্র্যান্ডিং: ধান নদী খাল- এই তিনে বরিশাল। এক্সেস টু ইনফর্মেশন প্রস্তাব মতে, জেলা ব্র্রান্ডিং: ইলিশ

আমড়া, দই, পান-সুপারি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ, বিভাগীয় সদরদপ্তর ও সিটি কর্পোরেশন বরিশাল শহরে অবস্থিত। দেশের অভ্যন্তরীণ সর্বাধিক গুরুত্বের নৌ-বন্দর বরিশালে অবস্থিত। যা দক্ষিণের নৌ-যোগাযোগের মূলঘাঁটি হিসেবেও পরিচিত। ‘ঢাকা-টু-বরিশাল’ রুটের বিলাসবহুল প্রমোদতরী অনন্য এক পর্যটন আকর্ষণ। অভ্যন্তরীণ ধৃত মৎস্যের বড় বাণিজ্য বরিশাল পোর্টরোড’কে ঘিরে। বানারীপাড়ার ধান, উজিরপুরের পান ও গৌরনদীর দই- বিশ^জোড়া। গলদা চিংড়ি, রূপালি ইলিশ ও ভাসমান কৃষিসহ সাক্করখোনা পোলাও চাল, মুড়ি ও আমড়া উৎপাদনেও এককালের ‘বালাম’ খ্যাত বরিশাল শ্রেষ্ঠ। ঔষধ, সিমেন্ট, জুতা, টেক্সটাইল ও জাহাজ নির্মাণ শিল্পসহ বিমানবন্দর ও আইটিপার্ক রয়েছে বরিশালে। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়, শতবর্ষী ব্রজমোহন কলেজ, শেরেবাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়, বরিশাল আধুনিক সদর হাসপাতাল, বরিশাল ক্যাডেট কলেজ, বরিশাল জিলা স্কুল, সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বরিশাল প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় ও বরিশাল মেরিন একাডেমি ছাড়াও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডসহ বহু কারিগরি ও সাধারণ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ জেলায়। কড়াপুর ‘মিয়াবাড়ি’ ও চরামদ্দি ‘মুগাখাঁ’ প্রাচীন জামে মসজিদসহ গুঠিয়ার দৃষ্টিনন্দন জামে মসজিদ, পদ্মপুকুর, সাতলাবিল, প্লানেটপার্ক ও বঙ্গবন্ধু উদ্যানসহ প্রাচীন ঐতিহ্যের বিবির পুকুর, অক্সফোর্ড মিশন, বরিশাল মহাশ্মশান, পাদ্রিশিবপুর গির্জা, দুর্গাসাগর ও লাকুটিয়া-উলানিয়া-কলসকাঠি-চরামদ্দি জমিদারিত্বের পদচিহ্ন এ জেলায় দৃশ্যমান। কীর্ত্তণখোলা নদীর তীরে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্মারক ৩০-গোডাউনসহ চাখারে রয়েছে কিংবদন্তী শেরেবাংলা যাদুঘর। দ্বীনী খেদমতে জেলায় অবস্থিত পীর ছাহেব হযরত মাওলানা সাইয়েদ মুহাম্মদ ইসহাক প্রবর্তিত দেওবন্দ ধারার চরমোনাই দরবার শরীফ। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে রেল-সংযোগে পদ্মা-পায়রা ৪-লেনের মহাসড়ক, আড়িয়ালখাঁ সেতু, ভোলা-বরিশাল বহুমুখী সেতু, অর্থনৈতিক জোন, পারমানবিক কেন্দ্র, বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার, বিভাগীয় চিড়িয়াখানা, কোস্টগার্ডের রিজিওনাল সদরদপ্তর, বিটিভি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র, বাংলাদেশ শিল্প কারিগরি সহযোগিতা কেন্দ্র-বিটাক, বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস এন্ড ডিফেন্স সদর দপ্তর। রয়েছে ‘চন্দ্রদ্বীপ’ নামে নতুন একটি উপজেলা প্রতিষ্ঠার প্রাণপণ জনপ্রচেষ্টা।
পটুয়াখালী:পটুয়াখালী শহরের উত্তরে অবস্থিত লোহালিয়া ও পায়রা নদী সংযোগকারী এককালের ‘পতুয়া’ নামক ভারানীখাল (লাউকাঠি নদী) দিয়ে আগত মগ ও পর্তুগীজ জলদস্যুরা স্থানীয়দের উপর অতর্কিতে হামলা ও লুণ্ঠন চালাতো। জনশ্রæতি রয়েছে, ‘পতুয়াখাল’ হতে পটুয়াখালী নামকরণের। পেট আকৃতি খাল হতে কিংবা বর্গী বিতাড়িত মৃৎপাত্র কারিগর ‘পটুয়া’ সম্প্রদায় থেকে পটুয়াখালী নামকরণের জনশ্রæতিও কম নয়। এ জেলার প্রতিষ্ঠাকাল ১ জানুয়ারি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দ। লাউকাঠি নদীর তীরে পটুয়াখালী জেলা অবস্থিত। জেলার আয়তন ৩,২২১.৩১ বর্গকিলোমিটার। ৮টি উপজেলা, ৮টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭৬টি ইউনিয়ন ও ৮৮২টি গ্রামযোগে পটুয়াখালী জেলা গঠিত। জেলার জনসংখ্যা ১৫,৩৫,৮৫৪ জন, সংসদীয় আসন ৪টি ও শিক্ষার হার ৬৫%। জেলা ব্র্যান্ডিং: কুয়াকাটা অনন্যা, পটুয়াখালী সাগরকন্যা। সুলতান রুকন উদ্দীন বরবক শাহ্ কর্তৃক ১৪৬৫ সালে নির্মিত পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে অবস্থিত মসজিদবাড়িয়া’র শাহী জামে মসজিদটি সুলতানী আমলের স্মৃতি বহন করে। মির্জাগঞ্জের মাজার ও দরবার শরীফ ঘিরে আধ্যাত্মিক ধর্মসাধক হযরত ইয়ার উদ্দীন খলিফা ছাহেবের অলৌকিক ক্ষমতার বহু লোকশ্রæতি রয়েছে। চন্দ্রদ্বীপ রাজবংশের রাণী কমলা’র দীঘির নিদর্শন রয়েছে তেঁতুলিয়া নদীর পশ্চিমতীরে বাউফলের কচুয়াতে। কালাইয়াতে রয়েছে প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক বন্দর। পটুয়াখালী জেলার সমুদ্রপাড় কুয়াকাটায় ১৭৮৯ সালে আরাকান রাখাইন সম্প্রদায়ের অভিবাসন ঘটে। সুপেয় পানি পানের জন্য তাদের কাটা কুয়া হতে উদ্ভ‚ত ‘কুয়াকাটা’ বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রসৈকত ও নান্দনিক সৌন্দর্যের ইকোপার্ক। যা দেশের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের একমাত্র বেলাভ‚মিও বটে। সোনারচর, ফাতরারচর ও কাজলারচরসহ গঙ্গামতি সৈকত সাগরকন্যার সৌন্দর্যকে করেছে ঋদ্ধ। দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর পায়রাসহ দ্বিতীয় সাবমেরিন ল্যান্ডিং-স্টেশন এ জেলায় অবস্থিত। বঙ্গোপসাগরের কোলঘেঁষা এ জেলায় রয়েছে রাখাইন পল্লী, বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ মন্দির, মৎস্য ও শুটকি প্রক্রিয়াকরণ পল্লী, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও আধুনিক কৃষি খামার। আরো রয়েছে পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস, শর্ট ল্যান্ডিং এন্ড টেক অফ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় এবং ঐতিহ্যের জুবিলী হাইস্কুল। সড়ক যোগাযোগ নির্বিঘœকরণে চলমান প্রকল্পে রয়েছে লেবুখালী, পায়রা, গলাচিপা, আমতলী ও কারখানা আন্তঃজেলা সেতু নির্মাণ কাজ। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে এলএনজি বিদ্যুৎকেন্দ্র, এক্সক্লুসিভ ইকোনোমিক জোন, সমুদ্রঘাঁটি, বিমানবন্দর ও শিল্পপল্লীসহ বঙ্গবন্ধু উপশহর। আরো রয়েছে কনটেইনার ও এলএনজি টার্মিনাল, পাওয়ার স্টেশন, জেটি, শিপইয়ার্ড এবং জাহাজ মেরামত কারখানাসহ পায়রাকে আন্তর্জাতিক মানের গভীর সমুদ্র বন্দরে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় সকল আয়োজন। পর্যটক আকর্ষণসহ বেলাভ‚মির শ্রীবৃদ্ধিকরণে পায়রা-কুয়াকাটাতে নির্মিত হবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, সি-অ্যাকোরিয়াম, মেরিন-ড্রাইভ, স্টেডিয়াম-গলফ-টেনিস কমপ্লেক্স এবং কনভেনশন সেন্টারসহ মেরিন-ইকোপার্ক।
ভোলা:বাকেরগঞ্জ গেজেটিয়ার মতে, দক্ষিণের ধান, চাল, সুপারি, নারিকেল ও মৎস্য সম্পদের প্রতি প্রলুব্ধ হয়ে পনের শতকের গোড়ার দিকে মগ ও পর্তুগীজ দলদস্যুরা ঘাঁটি বানান ভোলা’র মনপুরা দ্বীপে। অতঃপর চারিদিকে লুটতরাজ নির্বিঘ করার লক্ষ্যে জন ডি সিলবেরা নামক জনৈক পর্তুগীজ জলদস্যু ১৫১৭ সালে প্রাচুর্যে ভরা নবীন পলল-গঠিত ভোলা দ্বীপ দখল করে নেয়,বেগবান করে স্থানীয়দের উপর অত্যাচার। লোককাহিনী রয়েছে, দক্ষিণ শাহাবাজপুরের অভ্যন্তর দিয়ে বয়ে চলা খাল সমতুল ‘বেতুয়া নদী’ পারাপারে ভোলা গাজী নামে এক বুড়ো পাটনী ছিল। বর্তমান যোগীর ঘোলের কাছে ছিল যার আস্তানা। পাটনী ভোলা গাজীর নামেই ভোলা জেলার নামকরণের জনমত সিদ্ধ। এ জেলা প্রতিষ্ঠা লাভ করে ১ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর মোহনায় ভোলা জেলা অবস্থিত। বিভাগীয় সর্ববৃহৎ জেলা ভোলার আয়তন ৩,৭৩৭.২১ বর্গকিলোমিটার। জলযোগাযোগের বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপজেলা ভোলায় রয়েছে ৭টি উপজেলা, ১০টি থানা, ৫টি পৌরসভা, ৭০টি ইউনিয়ন ও ৫৬০টি গ্রাম। এ জেলার মোট জনসংখ্যা ২০,৩৭,২০১ জন, সংসদীয় আসন ৪টি ও শিক্ষার হার ৪৭%। জেলা ব্র্রান্ডিং: বাংলাদেশের দ্বীপরাণী ভোলা। ভোলায় রয়েছে মনোলোভা মনপুরাদ্বীপ, নবীনদ্বীপ ঢালচর, দ্বীপসৈকত তারুয়া, দ্বীপকন্যা চর কুকরী-মুকরীসহ উপক‚লীয় সবুজ বেষ্টনীযোগে অসংখ্য নৈস্বর্গিক দ্বীপের সমাহার। মেঘনা-তেঁতুলিয়ার বুক চিরে জেগে ওঠা চরে রয়েছে মনোমুগ্ধকর ইকোপার্ক। স্বাধীনতা যাদুঘর, সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বেতুয়া ও রাসেল পার্কসহ খামারবাড়ি এবং মায়া-ব্রীজের মতো নানা পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে এ জেলায়। দ্বীপপুঞ্জের ভোলা প্রাকৃতিক গ্যাস ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ মহিষের দধি ও রূপালি ইলিশের জন্য বিখ্যাত। জলবিচ্ছিন্ন এ জেলায় রয়েছে একাধিক শুটকি পল্লী ও মৎস্য আহরণ কেন্দ্র। স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ভোলা আধুনিক সদর হাসপাতাল। উন্নয়নের মহাসড়কে রয়েছে মৎস্য ও হাইড্রো ট্যুরিজম বিকাশসহ অপার শিল্প সম্ভাবনার বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। এছাড়াও রয়েছে মূল ভ‚-খন্ড (বরিশাল) সংযোগে পায়রাবন্দর অভিমুখী কালাবদর-তেঁতুলিয়া নদীর উপর নির্মিতব্য দেশের সর্বাধিক দৈর্ঘ্যরে ভোলা-বরিশাল সড়ক যোগাযোগ সেতু।
ঝালকাঠি:সন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি ও বিষখালী নদী’কে ঘিরে রয়েছে কৈবর্ত জেলে বা ঝালো পাড়ার ইতিহাস। ঝালো সম্প্রদায় অধ্যুষিত প্রাচীন মহারাজগঞ্জের জমিদার শ্রী কৈলাশ চন্দ্রের বৈঠকখানা ঘিরে গড়ে ওঠা তখনকার বাজার বা গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রয় করতো। বন-জঙ্গল (কাঠি) কেটে তারা গড়ে তুলতো আবাসস্থল। ঝালকাঠি নামটি জালের কাঠি কিংবা ঝালো (জেলে) ও কাঠি (কাঠ) শব্দের সমন্বয়ে উৎপত্তির যুক্তি যথার্থ। ঝালকাঠি জেলার প্রাচীন নাম ‘মহারাজগঞ্জ’। এ জেলার প্রতিষ্ঠাকাল ১ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ। নদীবন্দর এ জেলাটি সুগন্ধা নদীর তীরে অবস্থিত। বিভাগীয় ক্ষুদ্রতম এ জেলার আয়তন ৭৫৮.০৬ বর্গকিলোমিটার। জেলায় রয়েছে ৪টি উপজেলা, ৪টি থানা, ২টি পৌরসভা, ৩২টি ইউনিয়ন ও ৪৭১টি গ্রাম। জনসংখ্যা রয়েছে ৬,৯৪,২৩১ জন, সংসদীয় আসন ২টি ও শিক্ষার হার ৬৬.৭০%। জেলা ব্র্যান্ডিং: পেয়ারা আর শীতলপাটি এই নিয়ে ঝালকাঠি। এ জেলার কাঠালিয়া উপজেলায় পাঁচ নদীর মোহনায় গড়ে ওঠেছে অন্যতম পরিবেশ উদ্যান ধানসিঁড়ি ইকোপার্ক (ছৈলার চর)। প্রাচীন ব্যবসায় সুপ্রসিদ্ধতা বিবেচনায় ঝালকাঠিকে বলা হতো দ্বিতীয় কোলকাতা। প্রচুর মিঠা পানির মাছের সমাগম রয়েছে এ জেলায়। ভীমরুলি ভাসমান বাজারে রয়েছে ‘বাংলার আপেল’ খ্যাত পেয়ারার পর্যটনীয় আকর্ষণ। ঝালকাঠির গামছা ও শীতলপাটি জগৎখ্যাত। এখানকার সুগন্ধিযুক্ত কাগজি লেবুরও রয়েছে সুখ্যাতি। জেলায় রয়েছে সুজাবাদ কেল্লা, পোনাবালিয়া মন্দির ও কীর্ত্তিপাশা জমিদারবাড়ির মতো প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন। শেরেবাংলা’র মাতুলালয় সাতুরিয়া জমিদারবাড়ি ও জীবনানন্দের ঐতিহাসিক ‘ধানসিঁড়ি নদী’ এ জেলায় অবস্থিত। ইসলামের উচ্চশিক্ষার ঐতিহ্যে জেলায় রয়েছে হযরত মাওলানা মোহাম্মদ আযীযুর রহমান (কায়েদ ছা’ব হুজুর) প্রতিষ্ঠিত নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসা। ‘বাংলার সুয়েজখাল’ খ্যাত গাবখান চ্যানেলে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন সুউচ্চ ‘গাবখানসেত’ু। স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে নির্মাণাধীন ২৫০ শয্যার আধুনিক সদর হাসপাতাল। উন্নয়নে রয়েছে পল্লী অবকাঠামো ও আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রভ‚ত কর্মযজ্ঞ।
বরগুনা: একদা উত্তর অঞ্চলের কাঠব্যবসায়ীরা বরগুনার খর¯্রােতা খাকদোন নদীর ¯্রােতের বিপরীতে বড় বড় গুন (দড়ি) টেনে কাঠবাহী নৌকা চালিয়ে নিতেন কিংবা নৌকা চালানোর জন্য তারা বড় গোনের (জোয়ার) অপেক্ষায় থাকতেন দীর্ঘক্ষণ। ধারণা করা হয়, ‘বড়গুন’ থেকে বরগুনা নামের উৎপত্তি। কেউ কেউ মনে করেন বরগুনা নামের প্রভাবশালী এক রাখাইন বা তথাকথিত এক বাওয়ালীর নাম হতে বরগুনা নামকরণ হয়। জেলার প্রতিষ্ঠাকাল ২৮ ফেব্রæয়ারি ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ। সমুদ্রের কোলঘেঁষা জেলা বরগুনা খাকদোন নদীর তীরে অবস্থিত। এ জেলার আয়তন ১,৯৩৯.৩৯ বর্গকিলোমিটার। ৬টি উপজেলা, ৬টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৪২টি ইউনিয়ন ও ৫৬০টি গ্রামযোগে এ জেলা গঠিত। জেলার জনসংখ্যা ৮,৯২,৭৮১ জন, সংসদীয় আসন ২টি ও শিক্ষার হার ৬২.১০%। জেলা ব্র্র্যান্ডিং: সৈকত সৌন্দর্যে বরগুনা। লালদিয়া, সোনাকাটা ও শুভসন্ধ্যা সৈকতসহ সুন্দরবনের ধারাবাহিকতায় দ্বিতীয় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ‘টেংরাগিরি ইকোপাকর্’ যোগে সাগর-নদী-বনভূমির অপরূপ মিলনমেলার সুবর্ণভ‚মি বরগুনা। পাথরঘাটার হরিণঘাটা অতি মোহনীয় একটি ইকোপার্ক। উপজেলা বেতাগীতে অবস্থিত মোগল ঐতিহ্যের বিবিচিনি মসজিদটি পারস্য আগত ইসলাম প্রচারক শাহ্ নেয়ামত উল্লাহ’র মেয়ে চিনিবিবি’র নামে বলে ধারণা করা হয়। তালতলী বৌদ্ধমন্দির ও ক্লে-ফোর্টসহ আমতলীর পৌরলেক পর্যটন আকর্ষণীয়। সামুদ্রিক ও অভ্যন্তরীণ মৎস্যের অভয়ারণ্য এ জেলা লবণ ও মিঠা পানির মাছে সমৃদ্ধ। নারিকেলঘেরা এ জেলায় রয়েছে রাখাইন সম্প্রদায়ের বসবাসসহ একাধিক শুটকিপল্লী। শিল্প প্রসারে রয়েছে বিসিক নগরী ও পাথরঘাটা জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প। স্বাস্থ্যসেবায় রয়েছে ২৫০ শয্যার বরগুনা আধুনিক সদর হাসপাতাল। উন্নয়নে রয়েছে আন্তঃজেলা যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ মফস্বলের অবকাঠামোসমূহ।
পিরোজপুর:মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে সুবেদার শাহ্ সুজা নলছিটির কাছে সুগন্ধা নদীর তীরে কেল্লা তৈরি করলেও জুমলার পরবর্তী হামলায় তিনি তাঁর দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানেও তিনি অন্য এক রাজার চক্রান্তে প্রাণ হারান। অন্যদিকে সুগন্ধার তীরে রেখে যাওয়া তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র ধীরে ধীরে পশ্চিমে এগিয়ে পিরোজপুরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দামোদর নদীর তীরে আস্তানা গড়ে তোলেন। সুজা শাহের শিশুপুত্রটিই ফিরোজ শাহ্ এবং তদীয় নামেই পিরোজপুর নামকরণের জনশ্রæতি রয়েছে। তবে সেলিমাবাদের শাসক মোগল কর্মচারি ফিরোজের নামেও পিরোজপুর নামকরণের রয়েছে ভিন্ন একটি মত। ‘রায়েরকাঠি’ পিরোজপুরের প্রাচীন পরিচিতি- যা সেলিমাবাদ পরগণাভ‚ক্ত ছিল। বরিশাল বিভাগের সর্বশেষ জেলা গঠনে এর প্রতিষ্ঠাকাল ১ মার্চ ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা পিরোজপুর জেলা দামোদর ও বলেশ^র নদীর তীরে অবস্থিত। জেলার আয়তন ১,৩০৭.৬১ বর্গকিলোমিটার। ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৫৪টি ইউনিয়ন ও ৬৪৮টি গ্রামযোগে এ জেলা গঠিত। এ জেলায় জনসংখ্যা মোট ১১,১৩,২৫৭ জন, সংসদীয় আসন ৩টি ও শিক্ষার হার ৬৪.৯০%। জেলা ব্র্যান্ডিং: মাল্টার সুবর্ণভ‚মি পিরোজপুর। বলেশ^র নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অপার সৌন্দর্যের পিরোজপুর রিভারভিউ ইকোপার্ক (ডিসিপার্ক)। ইন্দুরকানীতে পানগুছি নদীর মোহনায় জীব-বৈচিত্র্যের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (ছৈলার বন) ও ভাÐারিয়াতে গড়ে উঠেছে মনোরম দৃশ্যের হরিণপালা ইকোপার্ক। নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি, ইন্দিরহাট ও মিঞারহাট এলাকা ঘিরে ঐতিহ্যবাহী কাঠের ব্যবসায়, ছোবড়া (রশি) ও ট্রলার নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠার পাশাপাশি বর্তমানে এলাকাটি পোল্ট্রি-ফিসারিজ শিল্পের বিকাশসহ ভেষজ কাঁচামাল উৎপাদনেও জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। জেলার হুলারহাটে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরের অবস্থান এবং বলেশ^রঘাটে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রয়েছে মঠবাড়িয়া মমিন মসজিদ, শিব মন্দির, সাপলেজা কুঠিবাড়ি, রায়েরকাঠি-পাড়েরহাট জমিদারবাড়ি ও কবি আহসান হাবীবের বাড়ি। ইসলামী জাগরণের অগ্রদূত শর্ষিণার প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী নেছারুদ্দীন আহমদ এর মাজার ও ছারছীনা দরবার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। নাজিরপুরের নয়নাভিরাম ভাসমান সবজিবাগান, আকলম-মাহমুদকাঠি’র সুখ্যাতির নার্সারি, আটঘর-কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারা ও আমড়া বাগানসহ পান, সুপারি, নারিকেল উৎপাদনে এ জেলা সুপরিচিত। অভ্যন্তরীণ মৎস্য প্রাচুর্যতা রয়েছে এ জেলায়। জেলাসদরে ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল রয়েছে স্বাস্থ্যসেবায়। জেলার চলমান ও উন্নয়ন প্রকল্পে রয়েছে বেকুটিয়া সেতুসহ টুঙ্গীপাড়া-নাজিরপুর-পিরোজপুর-ঝালকাঠি-বরিশাল সংযোগ মহাসড়ক এবং পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। এ ছাড়াও রয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো ও আন্তঃজেলা সড়ক-মহাসড়ক প্রকল্পের কাজসমূহ।মোগল স¤্রাট আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে সুবেদার শাহ্ সুজা নলছিটির কাছে সুগন্ধা নদীর তীরে কেল্লা তৈরি করলেও জুমলার পরবর্তী হামলায় তিনি তাঁর দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানেও তিনি অন্য এক রাজার চক্রান্তে প্রাণ হারান। অন্যদিকে সুগন্ধার তীরে রেখে যাওয়া তাঁর স্ত্রী ও শিশুপুত্র ধীরে ধীরে পশ্চিমে এগিয়ে পিরোজপুরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা দামোদর নদীর তীরে আস্তানা গড়ে তোলেন। সুজা শাহের শিশুপুত্রটিই ফিরোজ শাহ্ এবং তদীয় নামেই পিরোজপুর নামকরণের জনশ্রæতি রয়েছে। তবে সেলিমাবাদের শাসক মোগল কর্মচারি ফিরোজের নামেও পিরোজপুর নামকরণের রয়েছে ভিন্ন একটি মত। ‘রায়েরকাঠি’ পিরোজপুরের প্রাচীন পরিচিতি- যা সেলিমাবাদ পরগণাভ‚ক্ত ছিল। বরিশাল বিভাগের সর্বশেষ জেলা গঠনে এর প্রতিষ্ঠাকাল ১ মার্চ ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দ। সুন্দরবনের কোলঘেঁষা পিরোজপুর জেলা দামোদর ও বলেশ^র নদীর তীরে অবস্থিত। জেলার আয়তন ১,৩০৭.৬১ বর্গকিলোমিটার। ৭টি উপজেলা, ৭টি থানা, ৪টি পৌরসভা, ৫৪টি ইউনিয়ন ও ৬৪৮টি গ্রামযোগে এ জেলা গঠিত। এ জেলায় জনসংখ্যা মোট ১১,১৩,২৫৭ জন, সংসদীয় আসন ৩টি ও শিক্ষার হার ৬৪.৯০%। জেলা ব্র্যান্ডিং: মাল্টার সুবর্ণভ‚মি পিরোজপুর। বলেশ^র নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অপার সৌন্দর্যের পিরোজপুর রিভারভিউ ইকোপার্ক (ডিসিপার্ক)। ইন্দুরকানীতে পানগুছি নদীর মোহনায় জীব-বৈচিত্র্যের ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (ছৈলার বন) ও ভাÐারিয়াতে গড়ে উঠেছে মনোরম দৃশ্যের হরিণপালা ইকোপার্ক। নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি, ইন্দিরহাট ও মিঞারহাট এলাকা ঘিরে ঐতিহ্যবাহী কাঠের ব্যবসায়, ছোবড়া (রশি) ও ট্রলার নির্মাণ শিল্প গড়ে উঠার পাশাপাশি বর্তমানে এলাকাটি পোল্ট্রি-ফিসারিজ শিল্পের বিকাশসহ ভেষজ কাঁচামাল উৎপাদনেও জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। জেলার হুলারহাটে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরের অবস্থান এবং বলেশ^রঘাটে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। প্রাচীন ঐতিহ্যের স্বাক্ষর রয়েছে মঠবাড়িয়া মমিন মসজিদ, শিব মন্দির, সাপলেজা কুঠিবাড়ি, রায়েরকাঠি-পাড়েরহাট জমিদারবাড়ি ও কবি আহসান হাবীবের বাড়ি। ইসলামী জাগরণের অগ্রদূত শর্ষিণার প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা শাহ্ সুফী নেছারুদ্দীন আহমদ এর মাজার ও ছারছীনা দরবার শরীফ এ জেলায় অবস্থিত। নাজিরপুরের নয়নাভিরাম ভাসমান সবজিবাগান, আকলম-মাহমুদকাঠি’র সুখ্যাতির নার্সারি, আটঘর-কুড়িয়ানার বিখ্যাত পেয়ারা ও আমড়া বাগানসহ পান, সুপারি, নারিকেল উৎপাদনে এ জেলা সুপরিচিত। অভ্যন্তরীণ মৎস্য প্রাচুর্যতা রয়েছে এ জেলায়। জেলাসদরে ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল রয়েছে স্বাস্থ্যসেবায়। জেলার চলমান ও উন্নয়ন প্রকল্পে রয়েছে বেকুটিয়া সেতুসহ টুঙ্গীপাড়া-নাজিরপুর-পিরোজপুর-ঝালকাঠি-বরিশাল সংযোগ মহাসড়ক এবং পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। এ ছাড়াও রয়েছে গ্রামীণ অবকাঠামো ও আন্তঃজেলা সড়ক-মহাসড়ক প্রকল্পের কাজসমূহ।
তথ্যবিন্যাস ও সম্পাদনায়: মো. রুহুল আমিন, প্রকাশনা সম্পাদক, বরিশাল বিভাগ অফিসার্স এসোসিয়েশন
উৎস:
১. বাংলাদেশ জাতীয় তথ্য বাতায়ন
২. বৃহত্তর বাকরগঞ্জের ইতিহাস- সংগ্রহ ও সম্পাদনা: তপংকর চক্রবর্তী ও সিকদার আবুল কাশার
৩. বরিশাল বিভাগের ইতিহাস- সিরাজ উদ্দীন আহমদ
৪. বরিশাল বিভাগ পরিচিতি- সিরাজ উদ্দীন আহমদ
৫. চন্দ্রদ্বীপ- বাংলাপিডিয়া
৬. জেলা উইকিপিডিয়া